নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ফি নিয়ে বৈষম্যের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তবে যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের সব দায়িত্ব সরকার নেবে, এমনটা কিন্তু না। তবে বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব শিক্ষার্থী একই হারে বেতন দিচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের অনেক প্রত্যাশা, তবে এখানে অনেক সমস্যা আছে। যেগুলো সমাধানের বিষয় ভাবার সময় এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অডিটরিয়ামে প্রতিষ্ঠানটির ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এমন বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের নিজেদের পদ্ধতিই সব চলে। তাদের শিক্ষার্থীরা একটি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্বের স্বনামধন্য একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ রাখে। তবে কেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা ভর্তি নিতে হবে? শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও এইচএসসিতে একই বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর কেন আপনাদের কাছে এ বিষয়ে আবার পরীক্ষা দিতে হবে? আবার এ পদ্ধতিতে বিদেশি কারিকুলামে পড়া শিক্ষার্থীরা বাদ পড়ছে। অথচ তাদের অভিভাবকরাও এ দেশে কর পরিশোধ করছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বয়সের বাধা তুলে নিতে হবে। আসনের অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির কারণে বুলিং ও র্যাগিংসহ বিভিন্ন অঘটন ঘটছে। এখন সময় এসেছে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ধারণক্ষমতার মধ্যে চলে আসা উচিত।
এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক প্ল্যান নির্ধারণসহ বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে স্থান পেতে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিখাতে হবে। চাকরিপ্রত্যাশী এবং চাকরিদাতাদের প্রত্যাশার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। এই ঘাটতি পূরণে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লিংকেজ শিক্ষাক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীর গবেষণা পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করার পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে হবে। এখন যারা অনার্স-মাস্টার্স পাস করে বের হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছর পর এই সার্টিফিকেট অনুযায়ী কোনো কাজ নাও থাকতে পারে। ফলে এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু শর্টকোর্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে ভাষা শিক্ষা, আইসিটি ও কিছু সফট স্কিল বাধ্যতামূলকভাবে শেখানোর পথে হাঁটছি।
দীপু মনি বলেন, বর্তমানে কিছু মেগাপ্রকল্প চলছে। এসব প্রকল্প শেষ হলেও শিক্ষা হবে মেগাপ্রকল্প। বাজেটের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ। জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ কম হলেও টাকার অঙ্কে তা বহুগুণ বেড়েছে। বরাদ্দের চেয়ে বেশি জরুরি, শিক্ষার উপাদানগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করা। শিক্ষাক্রম ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো আগে নির্ধারণ করতে হবে। এখন থেকে আর কোনো শিক্ষক দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ছাড়া আর ক্লাস রুমে যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভারতে কোনো বৈষম্য নেই। যা আমাদের দেশে আছে। তবে ভারতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থেকে যে পরিমাণ ফি আদায় করা হয়, তা আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও বেশি। তাদের দেশে অ্যালামনাইদের থেকে যে অনুদান আসে, তাতে গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। আমাদের দেশের অন্তত পাঁচ হাজার অ্যালামনাই যদি পাঁচ হাজার টাকা করে অনুদান দিতেন তাহলে আমাদের ফান্ড আরো বশি হতো। আবার বরাদ্দ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নেই বেশি ব্যয় হয়, এমন অভিযোগ রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রম উন্নত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিকল্পনা নিতে হবে, যেখানে ইউজিসি সহযোগিতা করবে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পদ ও বিষয় অনুমোদন নিয়েই ইউজিসিতে বেশি আলোচনা শোনা যায়।
ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়ন না করে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো বিপজ্জনক। একথা অস্বীকার করা যাবে না। বিষয়টি উপলব্ধি করে ইউজিসি শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় তিনি কমিশনের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরো অনেক শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কমিশনের সদস্যসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।